প্রশ্ন: কাজা নামায কিভাবে আদায় করতে হয় ?                                                               

১.সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে যদি দেখি যে, সূর্য উঠে গেছে। তাহলে ফজরের কাজা কিভাবে পড়তে হবে? সূর্য উঠার পর ১৫/২০ মিনিট পর নাকি সূর্য যে অবস্থায় থাকে সাথে সাথেই ফজরের কাজা আদায় করে নিতে হবে? 

২.সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে যদি দেখে যে, সূর্য উঠে গেছে, তাহলে সকালে যদি ফজরের কাজাটা না পড়ে জোহরের নামাজের সাথে একসাথে পড়ে নেয় তাহলে কি তা জায়েজ হবে? 

৩. কাজা নামায কি সিরিয়াল অনুযায়ী পড়তে হয়? যেমন: ফজর আর জোহর যদি কাজা হয়, তাহলে যখন আসরের নামাজ পড়ব তখন আসরের নামাযের পূর্বে কি ফজর অত:পর যোহরের নামাযটা আদায় করে নিতে হবে? আর তা না করে যদি এশার সময় ঐ কাজাগুলো একসাথে পড়ে নেই তাহলে কি হবে?

উত্তর:

■ ১) ঘুম থেকে জাগার পর পবিত্র হয়ে অনতিবিলম্বে ফজরের নামায আদায় করে নিতে হবে সূর্য যে অবস্থায় থাকুক না কেন। মোটেও বিলম্ব করবে না। কেননা, সূর্য উদিত হওয়া শুরু হওয়ার পর প্রায় ১৫ মিনিট পর্যন্ত এই নিষিদ্ধ সময়ে কেবল সুন্নত বা সাধারণ নফল নামায আদায় করা নিষেধ। ছুটে যাওয়া ফরয নামায কাজা করা দোষণীয় নয়। 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুম বা ভুলে যাওয়ার কারণে নামায কাজা হয়ে গেলে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার বা স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে অনতিবিলম্বে তা আদায় করতে বলেছেন। তবে কেবল ফরজ সালাতটা আদায় করা যাবে; সুন্নত নামাজ নয়। সুন্নত নামাজটা পড়া যাবে নিষিদ্ধ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর।

তবে যদি নিষিদ্ধ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর (সূর্য উদিত হওয়ার প্রায় ১৫ মি পর) ঘুম থেকে জাগ্রত হয় তাহলে পবিত্রতা অর্জন করত: প্রথমে ফজরের দু রাকআত সুন্নত পড়বে। অতঃপর ফজর সালাত আদায় করবে। কেননা এক সফরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবিদের ঘুমের কারণে ফজরের সালাত ছুটে গিয়েছিলো। সূর্যের তাপে তাদের ঘুম ভাঙ্গলে তারা সে স্থান ত্যাগ করে অন্যত্র গমণ করেন। অত:পর আজান দেয়া হয়। তারপর প্রথমে ফজরের দু রাকআত সুন্নত আদায় করার পর ফরজ সালাত জামাআতের সাথে আদায় করেন। (সহিহ মুসলিম)

■ ২. ফজরের ছুটে যাওয়া কাজা নামায ইচ্ছাকৃত ভাবে বিলম্ব করা বা তা যোহরের সাথে মিলিয়ে আদায় করা জায়েজ নয়। অন্যথায় গুনাহগার হতে হবে। বরং ওজর বশত: কোন নামায ছুটে গেলে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি তা আদায় করে দায়িত্বমুক্ত হওয়া জরুরি।

■ ৩. একাধিক ওয়াক্তের নামায ছুটে গেলে সেগুলো পরবর্তীতে কাজা করার সময় ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ওয়াজিব অর্থাৎ আগেরটা আগে এবং পরেরটা পরে আদায় করতে হবে। (এটি জুমহুর বা অধিকাংশ আলেমের অভিমত)

● ক. ঘুম বা ভুলে যাওয়ার কারণে কারও নামায ছুটে গেলে তার করণীয় হল, ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া বা স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে তা কাজা করে নেয়া। তাহলে এতে কোন গুনাহ হবে না। কিন্তু স্মরণ আসা বা ঘুম ভাঙ্গার পরও কাজা করতে বিলম্ব করলে গুনাহ হবে। যেমন নিম্নোক্ত হাদিসটি:

আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: 

مَنْ نَسِىَ صَلاَةً فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا لاَ كَفَّارَةَ لَهَا إِلاَّ ذَلِكَ

“যে ব্যক্তি কোন নামায পড়তে ভুলে যায়, সে যেন তা স্মরণ হওয়া মাত্র পড়ে নেয়। (এই কাজা আদায় করা ছাড়া) এর জন্য আর অন্য কোন কাফফারা (প্রায়শ্চিত্ত) নেই।” (বুখারি ৫৯৭, মুসলিম ১৫৯৮, মিশকাত ৬০৩ নং হাদিস)

● খ. অনুরূপভাবে কোন ব্যক্তি যদি বিনা ওজরেও ইচ্ছাকৃত ভাবে নামায ছেড়ে দেয় তাহলে সে আল্লাহর নিকট তওবা করবে এবং উক্ত নামায কাজা করবে অন্যথায় তার উপর অর্পিত দায়িত্ব থেকে মুক্ত হবে না। (যদিও এ বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে তবুও কাজা করে নেয়াই অধিক নিরাপদ)

● গ. একাধিক নামায ছুটলে আগেরটা আগে; পরেরটা পরে- এই পদ্ধতিতে ধারাবাহিকভাবে নামায আদায় করবে। 

● ঘ. ফরযের পাশাপাশি সুন্নতে রাতেবা বা ফরয নামাযগুলোর আগে বা পরের নিয়মিত সুন্নত নামাযগুলো পড়ার চেষ্টা করবে।

● ঙ . নিষিদ্ধ সময়েও কাজা নামায পড়া যাবে। তবে কেবল ফরজ নামায; সুন্নত বা নফল নয়। এগুলো পড়া যাবে নিষিদ্ধ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর।

উত্তর প্রদানে:

- শায়খ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

দাওরায়ে হাদীস, মাদ্রাসা মুহাম্মদীয়া আরাবীয়া, ঢাকা, বাংলাদেশ।