শিরক কেন সবচেয়ে বড় গোনাহ হিসাবে বিবেচিত ?


 ১. এতে ‘ইলাহ’- এর গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যে খালেক তথা সৃষ্টিকর্তার সাথে মাখলুক তথা সৃষ্ট বস্তুর তুলনা করা হয়৷ কেননা যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করলো, সে প্রকারান্তরে তাকে আল্লাহর অনুরূপ ও সমকক্ষ বলে স্থির করলো৷ আল্লাহ বলেন,

إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ ﴿13﴾ سورة لقمان

‘নিশ্চয়ই আল্লাহর সাথে শরীক করা মহা অন্যায়৷’

জুলুম বলা হয় কোন বস্তুকে তার আসল জায়গা থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় রাখা৷ সুতরাং যে গায়রুল্লাহর ইবাদত করে, সে মূলত: ইবাদাতকে তার আসল স্থানে না রেখে ইবাদাত পাওয়ার উপযুক্ত নয় এমন কারো উদ্দেশ্যে তা নিবেদন করে৷ আর এটা হল সবচেয়ে বড় জুলুম এবং অন্যায়৷


২. আল্লাহ তাআলা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দিয়েছেন, শিরক করার পর যে ব্যক্তি তা থেকে তওবা করবেনা, তিনি তাকে ক্ষমা করবেন না৷ আল্ল্লাহ বলেন:

إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيمًا ﴿48﴾ سورة النساء

‘নিশ্চয়ই আল্লাহর তাঁর সাথে শরীক করার পাপ ক্ষমা করেন না৷ এতদ্ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ তিনি ক্ষমা করেন, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন৷ ‘


৩. আল্লাহ এও বলেনওয, তিনি মুশরিকদের জন্য জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন এবং তারা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে অবস্থান করবে৷ তিনি বলেন

إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ ﴿72﴾ سورة المائدة

‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম৷ অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই৷’


৪. শিরক সকল আমরকে নষ্ট ও নিষ্ফল করে দেয়৷ আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَلَوْ أَشْرَكُوا لَحَبِطَ عَنْهُمْ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ﴿88﴾ سورة الأنعام

‘যদি তারা শিরক করত, তবে তাদের কাজকর্ম নিষ্ফল হয়ে যেত৷’

আল্লাহ আরো বলেন:

وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ ﴿65﴾ سورة الزمر

‘আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি ওহী প্রেরণ করা হয়েছে যদি আল্লাহর শরীক স্থির করেন, তবে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন হবেন৷’


৫. মুশরিক ব্যক্তির রক্ত (তথা প্রাণ সংহার) ও ধন-সম্পদ কেড়ে নেয়া উভয়ই হালাল৷ আল্লাহ তাআলা বলেন:

فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدْتُمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُوا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآَتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوا سَبِيلَهُمْ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ ﴿5﴾ سورة التوبة

‘অতঃপর মুশরিকদেরকে হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদেরকে বন্দী কর এবং অবরোধ কর৷ আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁত্ পেতে বসে থাক৷’

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

أمِرْتُ أنْ أقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَقُوْلُوْا لَاإلَهَ إلَّا الله، فإذَا قَالُوْاهَا عَصَمُوْا مِنِّي دِمَاءهُم وَأمْوَالَهُم إلَّا بِحَقِّهَا

‘আল্লাহ ছাড়া আর কোন হক মা’বুদ নাই, একথা বলা পর্যন্ত লোকজনের সাথে লড়ে যাওয়ার জন্য আমাকে আদেশ করা হয়েছে৷ অতঃপর যখনই তারা এই বাণী উচ্চরণ করল, আমার হাত থেকে তাদের জান-মাল তারা রক্ষা করে নিল৷ অবশ্য এ বাণীর দাবী অনুযায়ীকৃত দন্ডনীয় অপরাধের সাজা পেতেই হবে৷’


৬. কবীরা গোনাহসমূহের মধ্যে শিরক সবচেয়ে বড় গোনাহ৷

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

ألَا أنَبِئكُمْ بِأكْبَرِ الكَبَائرِ؟ قُلْنَا بَلَى يَارَسُوْلَ الله . قاَلَ الْإشْرَاكُ بِالله وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ.

‘আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গোনাহের সংবাদ দিব না? আমরা বললাম- জ্বী, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল ! তিনি বললেন: আল্লাহর সাথে শিরক করা এবং পিতা- মাতার অবাধ্য হওয়া৷’

শিরক হলো স্পষ্ট জুলুম ও অন্যায়৷ আল্লাহ তাআলা বলেন,

إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ ﴿13﴾ سورة لقمان

নিশ্চয়ই শিরক একটি বড় জুলুম’